কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো এ বিষয়ে জানতে চান? বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে কেনাকাটা, ভ্রমণ বা অনলাইন লেনদেন করার জন্য ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনকে সহজ ও নিরাপদ করে তুলেছে। তবে আমাদের অনেকের প্রশ্ন হলো, কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো? বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে অসংখ্য ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড অফার করছে। তবে আপনার জন্য সঠিক ক্রেডিট কার্ড বেছে নেওয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আজকের এই এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা, অসুবিধা ও কীভাবে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা কার্ডটি বেছে নেবেন তা বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে দেরি কেন চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ক্রেডিট কার্ড বেছে নেওয়ার আগে যা বিবেচনা করবেন
ক্রেডিট কার্ড বেছে নেওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা বেশ জরুরি। প্রথমত, আপনার জীবনধারা ও আর্থিক চাহিদা বিবেচনা করুন। আপনি কি ঘন ঘন ভ্রমণ করেন? অনলাইন কেনাকাটা করেন? নাকি নিয়মিত কেনাকাটার জন্য কার্ড চান? অন্যদিকে দ্বিতীয়ত, সুদের হার, বার্ষিক ফি ও অন্যান্য চার্জ যাচাই করুন। তৃতীয়ত, কার্ডের রিওয়ার্ড প্রোগ্রাম, ক্যাশব্যাক, এবং ডিসকাউন্ট অফারগুলো পরীক্ষা করুন। এছাড়া, কার্ডের গ্রহণযোগ্যতা (যেমন, ভিসা বা মাস্টারকার্ড) এবং গ্রাহক সেবার মানও গুরুত্বপূর্ণ। ক্রেডিট কার্ড বেছে নেওয়ার আগে যা বিবেচনা করবেন এ সম্পর্কে তো জানতে পেরেছেন এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রেডিট কার্ড অফারকারী ব্যাংক সম্পর্কে।
বাংলাদেশের শীর্ষ ক্রেডিট কার্ড অফারকারী ব্যাংক
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডের জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আমরা এখানে বেশ কিছু জনপ্রিয় ব্যাংক ও তাদের কার্ডের সুবিধা তুলে উপস্থাপন করেছি:
১. ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)
ইবিএল (ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড) তাদের ক্রেডিট কার্ডের জন্য বেশ পরিচিত। তাদের ভিসা, মাস্টারকার্ড ও ডাইনার্স ক্লাব কার্ডগুলো ক্ল্যাসিক থেকে প্রিমিয়াম ক্যাটাগরি পর্যন্ত বিস্তৃত। কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো? ইবিএলের কার্ডগুলো উত্তর হতে পারে কারণ এগুলোতে ১৫-৪৫ দিনের জন্য সুদমুক্ত সময় পাওয়া যায়, ইএমআই সুবিধা ও স্কাইলাউঞ্জের মতো প্রিমিয়াম সুবিধা রয়েছে। তবে, বার্ষিক ফি ও সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড এর যে কোন শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।
২. মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি)
এমটিবি (মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক) তাদের ক্রেডিট কার্ডে অনন্য সুবিধা প্রদান করে থাকে। যেমন: কার্ড চেক সুবিধা, যার মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া বা স্কুল ফি’র মতো পেমেন্ট খুব সহজে করা যায়। এছাড়া, বিদেশে ভ্রমণের জন্য এমটিবি কার্ডে ৫Marker0% পর্যন্ত ক্যাশ উত্তোলনের সুবিধা রয়েছে। কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো তা বিবেচনা করলে এমটিবি (মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক) ভ্রমণপ্রিয় ব্যক্তিদের জন্য বেশ ভালো হতে পারে।
৩. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
আপনি ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ক্রেডিট কার্ড চাইলে ইসলামী ব্যাংকের “খিদমাহ ক্রেডিট কার্ড” একটি ভালো পছন্দ হতে পারে। এটি সুদের পরিবর্তে শরিয়াহভিত্তিক লাভের হার প্রয়োগ করে থাকে। যা ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই কার্ডে ডেবিট ও প্রিপেইড সুবিধাও পাওয়া যায়। কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো তা নির্ধারণে ধর্মীয় পছন্দ থাকলে সেটি অসাধারণ হয়ে থাকে।
৪. ব্র্যাক ব্যাংক
ব্র্যাক ব্যাংক তাদের প্রিপেইড এবং ক্রেডিট কার্ডের জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বশেষ করে ব্র্যাক ব্যাংক ভ্রমণকারীদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয়। তাদের ট্র্যাভেল এবং হজ কার্ডে ভিসা-স্বীকৃত এটিএম থেকে নগদ উত্তোলন এবং বিশ্বব্যাপী কেনাকাটার সুবিধা রয়েছে। বার্ষিক ফি মাত্র ৫০০ টাকা + ১৫%। যা তুলনামূলকভাবে বেশ কম। কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো তা ভাবলে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রিপেইড কার্ড ভ্রমণপ্রিয়দের জন্য আদর্শ একটি ক্রেডিট কার্ড।
৫.সিটি ব্যাংক
সাম্প্রতিক সময়ের জনপ্রিয়তা শীর্ষে থাকা একটি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে সিটি ব্যাংক। সিটি ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যাংকিং সকল ধরনের সেবা প্রদান করার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডের সেবা মূলত প্রদান করে থাকে। সিটি ব্যাংকে ক্রেডিট করা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট ক্রয় করার পাশাপাশি ভ্রমণের জন্য অর্থ খরচ করার সুবিধা রয়েছে। বাংলাদেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে থাকেন।
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা
ক্রেডিট কার্ডের সুবিধার মধ্যে রয়েছে নগদ বহনের ঝুঁকি এড়ানো, ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট ও ৪৫ দিন পর্যন্ত সুদমুক্ত লেনদেন। তবে অসুবিধা হিসেবে উচ্চ সুদের হার (২-২.৫% মাসিক), বার্ষিক ফি, এবং অতিরিক্ত চার্জ (যেমন, দোকানীদের ২.৫% ফি) উল্লেখযোগ্য। সুতরাং, কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো তা বেছে নেওয়ার আগে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করুন। কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের চার্জ জেনে অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড নেওয়া উচিত।
ভিসা নাকি মাস্টারকার্ড?
ক্রেডিট কার্ড বেছে নেওয়ার সময় ভিসা এবং মাস্টারকার্ডের মধ্যে তুলনা করা জরুরি। ভিসা কার্ড আন্তর্জাতিকভাবে বেশি গ্রহণযোগ্য ও কম চার্জে লেনদেনের সুবিধা দেয়। অন্যদিকে, মাস্টারকার্ড অনলাইন কেনাকাটায় ক্যাশব্যাক এবং প্রিমিয়াম অফার (যেমন, ফ্রি লাউঞ্জ অ্যাকসেস) প্রদান করে। আপনার চাহিদা অনুযায়ী কার্ড নির্বাচন করুন। কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো তা নির্ভর করে আপনার আর্থিক চাহিদা, ভ্রমণ বা কেনাকাটার ধরনের ওপর।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের টিপস
- সময়মতো বিল পরিশোধ করুন: সুদ এড়াতে ৪৫ দিনের মধ্যে বিল পরিশোধ করুন।
- লিমিট নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত খরচ এড়াতে ক্রেডিট লিমিট সেট করুন।
- অফার যাচাই করুন: ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট, এবং ডিসকাউন্ট অফারের সুবিধা নিন।
- নিয়মিত স্টেটমেন্ট চেক করুন: সন্দেহজনক লেনদেন থেকে সুরক্ষিত থাকতে স্টেটমেন্ট যাচাই করুন।
কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো তা নির্ধারণে এই টিপসগুলো আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
আরও জানতে পারেনঃ রূপালী ব্যাংক লোন ক্যালকুলেটর
শেষ কথা
ক্রেডিট কার্ড বেছে নেওয়া আপনার ব্যক্তিগত চাহিদা এবং আর্থিক অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। ইবিএল, এমটিবি, ইসলামী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের জন্য শীর্ষ পছন্দ। তবে সুদের হার, বার্ষিক ফি, এবং অফারগুলো তুলনা করে নিজের জন্য সেরা কার্ডটি বেছে নিন। কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো তা জানতে ব্যাংকের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তথ্য দেখুন এবং প্রয়োজনে তাদের গ্রাহক সেবার সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক ক্রেডিট কার্ড আপনার জীবনকে আরও সহজ এবং সুবিধাজনক করে তুলবে।
One Comment