বিকাশ থেকে লোন গ্রহণ করার কথা হয়তো ভাবছেন। বর্তমান সময়ে বিকাশ জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের ডিজিটাল আর্থিক সেবার জগতে বিকাশ একটি অগ্রণী নাম। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) হিসেবে বিকাশ শুধুমাত্র লেনদেনের সুবিধাই দিচ্ছে না। বরং গ্রাহকদের জন্য ঋণ সুবিধাও প্রদান করছে। বিকাশের মাধ্যমে লোন পাওয়ার সুবিধা অনেকের জন্য জীবনযাত্রার মান উন্নত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। তবে, বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করতে হয়। এই আর্টিকেলে আমরা বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা, প্রক্রিয়া এবং এর সুবিধা ও সীমাবদ্ধতাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

বিকাশ লোন কী

বিকাশ লোন হলো বিকাশের মাধ্যমে প্রদত্ত একটি ডিজিটাল ঋণ সুবিধা।যা বাংলাদেশের সিটি ব্যাংকের  সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই লোন সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং ছোট পরিমাণের হয়ে থাকে।  যা ব্যক্তিগত প্রয়োজন, জরুরি খরচ, বা ছোট ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হয়। বিকাশ লোনের অন্যতম সুবিধা হলো এটি পাওয়ার জন্য ব্যাংকে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। লোন গ্রহণ থেকে পরিশোধ সবকিছুই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যায়।

বিকাশ লোন প্রধানত বর্তমান সময় নূনতম ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন প্রদান করে থাকে। 

বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা

বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হয়। এই শর্তগুলো বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের নীতিমালার উপর নির্ভর করে। নিচে প্রধান যোগ্যতাগুলো উল্লেখ করা হলো:

  • আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টটি কমপক্ষে ৬ মাস ধরে সক্রিয় থাকতে হবে।
  • বিকাশ অ্যাকাউন্টে নিয়মিত লেনদেন করতে হবে। যেমন মোবাইল রিচার্জ, বিল পেমেন্ট, টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা। এটি আপনার অ্যাকাউন্টের ক্রেডিট প্রোফাইল তৈরি করতে সাহায্য করে।
  • পনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে পূর্ণাঙ্গ KYC (Know Your Customer) ফর্ম পূরণ করা থাকতে হবে। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), ঠিকানা এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।
  • আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
  • সাধারণত ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের জন্য লোনের সুযোগ সীমিত হতে পারে।
  • বিকাশ ও সিটি ব্যাংক আপনার লেনদেনের ইতিহাস পর্যালোচনা করে একটি ক্রেডিট স্কোর তৈরি করে। নিয়মিত এবং সঠিক লেনদেন এই স্কোর উন্নত করতে সাহায্য করে।
  • যারা নিয়মিত বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন করেন ও পূর্ববর্তী ঋণ সময়মতো পরিশোধ করেছেন, তাদের লোন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • বিকাশ থেকে লোন গ্রহণ করার জন্য আয়ের প্রমাণপএ প্রয়োজন হয়না। 
  • আবেদনকারীকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্র থাকতে হবে।

বিকাশ লোন পাওয়ার প্রক্রিয়া

বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং দ্রুত। নিচে ধাপগুলো বর্ণনা করা হলো:

  1. প্রথমে আপনার বিকাশ অ্যাপে লগইন করুন। নিশ্চিত করুন যে আপনার অ্যাপটি সর্বশেষ সংস্করণে আপডেট করা আছে।
  2. বিকাশ অ্যাপের হোম স্ক্রিনে “লোন”  অপশনটি খুঁজে নির্বাচন করুন।
  3. অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য পরীক্ষা করে জানিয়ে দেবে আপনি লোনের জন্য যোগ্য কিনা।আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, লোনের পরিমাণ এবং পরিশোধের মেয়াদ নির্বাচন করে আবেদন ফর্ম পূরণ করুন।
  4. আবেদন জমা দেওয়ার পর বিকাশ এবং তাদের অংশীদার ব্যাংক আপনার আবেদন পর্যালোচনা করবে। অনুমোদিত হলে ঋণের টাকা সরাসরি আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

আরও জানতে পারেনঃ পদক্ষেপ এনজিও লোন পদ্ধতি

বিকাশ লোনের সুবিধা

বিকাশ লোনের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো:

  • ঐতিহ্যবাহী ব্যাংক ঋণের তুলনায় বিকাশ লোন অনেক দ্রুত প্রক্রিয়া করা হয়।
  • ছোট পরিমাণের ঋণ থেকে শুরু করে মাঝারি পরিমাণের ঋণ পর্যন্ত বিভিন্ন অপশন রয়েছে।
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো শারীরিক কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
  • গ্রামীণ এলাকার মানুষেরাও এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

শেষ কথা

বিকাশ থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা পূরণ করা ততটা জটিল নয়। যদি আপনি নিয়মিত বিকাশ ব্যবহার করেন এবং তাদের শর্তগুলো মেনে চলেন। সঠিক তথ্য এবং নিয়মিত লেনদেনের মাধ্যমে আপনি সহজেই এই সুবিধা পেতে পারেন। তবে, লোন নেওয়ার আগে সুদের হার, পরিশোধের মেয়াদ এবং আপনার আর্থিক সামর্থ্য ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিত। এই আর্টিকেলটি আপনাকে বিকাশ লোন সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যদি আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, বিকাশের অফিসিয়াল হেল্পলাইন বা অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন।

এই আর্টিকেলটি তথ্য প্রদানের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। লোন নেওয়ার আগে বিকাশের অফিসিয়াল নীতিমালা এবং শর্তাবলী পর্যালোচনা করুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *