দিশা এনজিও লোন এর কথা ভাবছেন কী? দিশা (Development Initiative for Social Advancement) বাংলাদেশের একটি জাতীয় পর্যায়ের অন্যতম একটি  বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। দিশা এনজিও ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

দিশা এনজিও গত ৩১ বছর ধরে এটি দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। দিশা এনজিও লোন হলো এমন একটি আর্থিক সেবা যা বিশেষ করে ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা করে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “দিশা এনজিও লোন” সম্পর্কৃত সকল তথ্য বিস্তারিত আকারে জানাবো। তাহলে দেরি কেন চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। 

দিশা এনজিও থেকে কত টাকা লোন পাওয়া যায়?

দিশা এনজিও বিভিন্ন ধরনের ঋণ সুবিধা প্রদান করে। যা গ্রাহকের প্রয়োজন ও যোগ্যতার ওপর নির্ভর করে। দিশা এনজিও এর সাধারণত লোন প্রদানের তথ্য নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছে:

  • ক্ষুদ্রঋণ: ৫,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা, যা ছোট ব্যবসা, কৃষি ওগৃহস্থালি প্রয়োজনের জন্য দিশা এনজিও প্রদান করে থাকে।
  • বিশেষ ঋণ: শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা স্যানিটেশনের জন্য ১৫,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা গ্রাহক লোনের মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারেন।
  • এমএসএমই ঋণ: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ২,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা লোন গ্রহণ করার সুবিধা রয়েছে। 

ঋণের পরিমাণ ও শর্তাবলী সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। সেহেতু দিশা এনজিও লোন নেওয়ার আগে নিকটস্থ শাখায় যোগাযোগ করে সর্বশেষ তথ্য নিশ্চিত করুন। দিশা এনজিও এর যে কোন শাখার কর্মকর্তা আপনাকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের চেষ্টা করবেন।

দিশা এনজিও লোন নেওয়ার পদ্ধতি

দিশা এনজিও থেকে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও বেশ গ্রাহকবান্ধব। নিচে ধাপগুলো উল্লেখ করা হয়েছে:

  1. শাখায় যোগাযোগ: নিকটস্থ দিশা এনজিও শাখায় গিয়ে ঋণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন। বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে একটি দিশা এনজিও এর শাখা রয়েছে।
  2. আবেদন ফরম পূরণ: আবেদনকারীকে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। যেখানে ব্যক্তিগত তথ্য, আয়ের উৎস এবং ঋণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করতে হবে।
  3. নথিপত্র জমা: প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (নিচে উল্লেখিত) সহ ফরম জমা দিতে হবে।
  4. যাচাই ও অনুমোদন: দিশার কর্মকর্তারা আবেদনকারীর যোগ্যতা এবং আর্থিক অবস্থা যাচাই করে ঋণ অনুমোদন করেন।
  5. ঋণ বিতরণ: অনুমোদনের পর ৭-১৫ কার্যদিবসের মধ্যে ঋণ প্রদান করা হয়।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দিশা এনজিও লোন দ্রুত ও সহজে গ্রাহকের হাতে লোনের অর্থ পৌঁছায়।

দিশা এনজিও লোনের যোগ্যতা

অন্যান্য এনজিও এর মতোন দিশা এনজিও থেকে ঋণ পেতে শর্ত পূরণ করতে হয়। দিশা এনজিও এর যেসকল শর্ত পূরণ করতে হয় তার মধ্যে রয়েছে:

  • আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  • বাংলাদেশের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
  • আয়ের একটি স্থিতিশীল উৎস থাকতে হবে। যেমন: কৃষি, ছোট ব্যবসা বা বৈধ্য অন্যান্য কাজ।
  • নিম্ন আয়ের পরিবার ও নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
  • ঋণখেলাপির রেকর্ড থাকলে ঋণ প্রদান করা হবে না।
  • বড় ঋণের জন্য গ্যারান্টার প্রয়োজন হতে পারে।

এই শর্তগুলো পূরণ করলে আপনি দিশা এনজিও লোন পাওয়ার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। এবার তবে লোনপর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপএ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

দিশা এনজিও থেকে ঋণ পেতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র প্রদান করতে হবে। এসকল নথিপত্রের মধ্যে রয়েছে:

  • জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি।
  • সদ্য তোলা ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
  • স্থায়ী ঠিকানার প্রমাণ (যেমন: ইউটিলিটি বিল বা চেয়ারম্যানের সনদ)।
  • আয়ের প্রমাণ (যেমন: ব্যবসায়ের বিবরণী বা আয়ের সনদ)।
  • গ্যারান্টারের জাতীয় পরিচয়পত্র এবং স্বাক্ষর (প্রয়োজন হলে)।
  • দিশা এনজিওর শাখা থেকে সরবরাহকৃত আবেদন ফরম।

এই নথিপত্রগুলো সঠিকভাবে জমা দিলে দিশা এনজিও লোন পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়।

দিশা এনজিও লোনের সুদের হার

দিশা এনজিওর সুদের হার সাধারণত ১২-১৫% এর মধ্যে থাকে। সুদের হার সাধরণত ঋণের ধরন এবং মেয়াদের ওপর নির্ভর করে। পরিশোধের সময়সীমা সাধারণত ৬ মাস থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত হয়। সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের সুবিধা গ্রাহকদের আর্থিক চাপ কমায়। দিশা এনজিও লোন নেওয়ার আগে সুদের হার ও শর্তাবলী সম্পর্কে শাখা থেকে বিস্তারিত তথ্য নিন।

দিশা এনজিও লোনের সুবিধা

দিশা এনজিও লোনের কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে। এসকল সুবিধার মধ্যে রয়েছে:

  • জামানতবিহীন ঋণ: সাধারণত কোনো জামানতের প্রয়োজন হয় না। যা নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য উপযোগী।
  • দ্রুত প্রক্রিয়া: আবেদন থেকে ঋণ বিতরণ পর্যন্ত ৭-১৫ দিন সময় লাগে।
  • নারীর ক্ষমতায়ন: নারীদের জন্য বিশেষ ঋণ ও প্রশিক্ষণ সুবিধা।
  • নমনীয় পরিশোধ: সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের সুবিধা।
  • বিভিন্ন ধরনের ঋণ: ক্ষুদ্র ব্যবসা, শিক্ষা  ও কৃষি কাজের জন্য লোন।
  • সাশ্রয়ী সুদের হার: ১২-১৫% সুদের হার।  যা অনেক এনজিওর তুলনায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে কম।
  • সম্প্রদায় উন্নয়ন: ঋণের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ।

এই সুবিধাগুলো দিশা এনজিও লোনকে গ্রাহকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।

কেন দিশা এনজিও বেছে নিবেন?

দিশা এনজিও বেছে নেওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে।যেমন:

  • দীর্ঘ অভিজ্ঞতা: ৩১ বছরের অভিজ্ঞতার সাথে দিশা বাংলাদেশের একটি নির্ভরযোগ্য সংস্থা।
  • গ্রাহককেন্দ্রিক সেবা: সহজ আবেদন প্রক্রিয়া ও দ্রুত ঋণ বিতরণ।
  • নারী ও দরিদ্রদের অগ্রাধিকার: নারী উদ্যোক্তা এবং নিম্ন আয়ের পরিবারদের জন্য বিশেষ সুবিধা।
  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধন ও স্বচ্ছ কার্যক্রম।
  • বিস্তৃত নেটওয়ার্ক: বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় শাখা ও সেবা কেন্দ্র রয়েছে। 

এই কারণগুলো দিশা এনজিও লোনকে অন্যান্য সংস্থার তুলনায় আলাদা করে।

আরও জানতে পারেনঃ কোন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ভালো

শেষ কথা

দিশা এনজিও লোন বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের মানুষের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক সমাধান। দিশা এনজিও লোনের সহজ প্রক্রিয়া, জামানতবিহীন ঋণ ও সাশ্রয়ী সুদের হার এটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে। আপনি যদি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে, শিক্ষার জন্য অর্থায়ন করতে বা জরুরি প্রয়োজন মেটাতে চান। তবে দিশা এনজিও আপনার পাশে রয়েছে। ঋণ নেওয়ার আগে নিকটস্থ শাখা বা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.disabd.org) থেকে সর্বশেষ তথ্য যাচাই করুন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

দ্রষ্টব্য: সুদের হার এবং শর্তাবলী সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। সর্বশেষ তথ্যের জন্য দিশা এনজিওর শাখা বা অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যোগাযোগ করুন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *