পাসপোর্ট তথ্য কেন্দ্র সম্পর্কে আমরা কমবেশি জানতে চাই। কিন্তু উপযুক্ত তথ্য না থাকার জন্য আমরা অনলাইনে পাসপোর্ট তথ্য কেন্দ্র থেকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারি না। তবে চিন্তা নেই আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে “পাসপোর্ট তথ্য কেন্দ্র” সম্পর্কিত সকল তথ্য জানাবো।
পাসপোর্ট তথ্য কেন্দ্র কী?
পাসপোর্ট তথ্য কেন্দ্র হলো এমন একটি তথ্য ভান্ডার যেখানে পার্সপোর্ট সম্পর্কিত সকল তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের সুবিধার জন্য পার্সপোর্ট সম্পর্কিত সকল সেবা epassport.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রদান করছেন।
পাসপোর্ট তথ্য কেন্দ্র ( আপডেট তথ্য)
ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) হল একটি উন্নতমানের ভ্রমণ নথি, যা নিরাপত্তা ও সারা বিশ্বে পার্সপোর্টের গ্রহণযোগ্যতার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। নিম্নে পাসপোর্ট তথ্য কেন্দ্র তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে:
- ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে পূরণ করা যাবে। আবেদনকারীদের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। ওয়েবসাইট ঠিকানা: epassport.gov.bd।
- বর্তমান সময়ে পার্সপোর্টের আবেদনপত্রের জন্য কোনো কাগজপত্র সত্যায়ন করার প্রয়োজন নেই।
- পূর্বের ন্যায় বর্তমান সময়ে আবেদন ফরমে ছবি সংযোজন ও সত্যায়ন করতে হবে না।
- আবেদন ফরম জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ (BRC English Version) অনুযায়ী পূরণ করতে হবে। অবশ্যই সঠিক ভাবে সকল তথ্য পূরণ করতে হবে।
- ১৮ বছরের কম বয়সী আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে পিতা বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান বাধ্যতামূলক। অবশ্যই তথ্য পূরণ করার সময় সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সনদ নিম্নলিখিত নিয়ম অনুযায়ী দাখিল করতে হবে:
- ১৮ বছরের নিচে: শুধুমাত্র অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ বলতে জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন সংস্করণে হতে হবে।
- ১৮-২০ বছর: জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ। জন্ম নিবন্ধন সনদ হলে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন সনদ অনলাইন সংস্করণ হতে হবে।
- ২০ বছরের বেশি: শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্র হলেই হবে। ২০ বছরের অতিরিক্ত হলে জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন নেই।
- বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে আবেদন করলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণযোগ্য।
- দত্তক বা অভিভাবকত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ দাখিল করতে হবে।
- পাসপোর্ট আবেদনের জন্য নির্ধারিত বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, অথবা বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনে আবেদন জমা দিতে হবে। উদাহরণ: আপনার যদি জেলা শহরে যদি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থাকে তাহলে জেলার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
পাসপোর্টের বৈধতা ও অতিরিক্ত কাগজপত্র:
- ১৮ বছরের কম বয়সীদের ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর হবে এবং এটি ৪৮ পৃষ্ঠার হবে।
- টেকনিক্যাল সনদ (যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ড্রাইভার) আপলোড করতে হবে।
- সরকারি আদেশ (GO), NOC, প্রত্যয়নপত্র, PRL Order, বা পেনশন বই প্রযোজ্য হলে আপলোড করতে হবে।
- বিবাহ বা তালাকের ক্ষেত্রে বিবাহ সনদ বা তালাকনামা দাখিল করতে হবে।
- পাসপোর্ট ফি-এর সাথে সরকার নির্ধারিত ভ্যাট ও অন্যান্য চার্জ প্রদান করতে হবে।
- বিদেশে আবেদনকারীদের সরকার নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে।
- কূটনৈতিক পাসপোর্টের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ওয়েলফেয়ার উইং অথবা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে।
- বিদেশস্থ মিশনে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করলে বাংলাদেশের স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
বিশেষ পরিস্থিতিতে আবেদন:
- অতি জরুরি পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সাথে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স দাখিল অবশ্যই প্রয়োজন হবে ।
- পাসপোর্ট ইস্যুর সময়সীমা নিম্নরূপ:
অতি জরুরি: ২ কর্মদিবস।
জরুরি: ৭ কর্মদিবস।
নিয়মিত: ১৫ কর্মদিবস।
- অতি জরুরি পাসপোর্ট পেতে হলে নিজ উদ্যোগে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
- পাসপোর্ট রি-ইস্যুর ক্ষেত্রে পুরাতন পাসপোর্টের মূল কপি প্রদর্শন করতে হবে।
- হারানো পাসপোর্টের ক্ষেত্রে থানায় জিডি করতে হবে এবং জিডির কপি দাখিল করতে হবে।
- ৬ বছরের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে ৩ আর সাইজের (গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ড) ছবি দাখিল করতে হবে।
- যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে, তারা নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- আবেদনকালে জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র দাখিল করতে হবে।
তথ্যসূত্র: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বহিরাগমন শাখার নির্দেশিকা।
পার্সপোর্ট অফিসের সময়সূচী
বাংলাদেশে অবস্থিত সকল পার্সপোর্ট অফিস সপ্তাহে ২ দিন বন্ধ থাকে। যথা: শুক্রবার ও বৃহস্পতিবার। এসকল দিন ছাড়াও সরকারি দিনগুলিতে পার্সপোর্ট অফিস বন্ধ থাকে। সেহেতু পার্সপোর্ট অফিসে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দেওয়ার আগে অবশ্যই শুক্রবার,শনিবার ও ছুটির দিন গুলি উপেক্ষা করুন। পার্সপোর্ট অফিস খোলার সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। তবে কিছু ক্ষেএে অফিস খোলা থাকার সময় পরিবর্তন হতে পারে।
পার্সপোর্ট অফিসের মোবাইল নাম্বার
বাংলাদেশে পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্যে জানতে চাইলে ০২-৮১২৩৭৮৮ নম্বরে কল করে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে পারবেন। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি সংস্থা, যার নিজস্ব ওয়েব পোর্টাল রয়েছে। ই-পাসপোর্ট প্রদানে দায়ী কান্ট্রি সাইনিং সার্টিফিকেট অথরিটি (CSCA), যা ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগ পরিচালনা করে। এছাড়াও পার্সপোর্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য আপনি e-passport এর অফিশিয়াল ইমেইল ঠিকানায় ইমেইল করে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন।
পাসপোর্টে কি কি তথ্য থাকে?
একটি পাসপোর্টে সাধারণত ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ ও স্থান, ছবি, স্বাক্ষর এবং অন্যান্য শনাক্তকরণের তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত, ৬০টি দেশ বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট চালু করেছে, এবং এপ্রিল ২০১৭ অনুযায়ী এই সংখ্যা বেড়ে ৯৬ হয়েছে। পূর্বে ইস্যুকৃত একটি পাসপোর্ট সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত বৈধ থাকে।
পাসপোর্ট কি সংশোধন করা যায়?
যদি আপনার প্রথম পাসপোর্টে ভুল তথ্য থাকে, তবে সেই ভুল তথ্যযুক্ত পাসপোর্টটি দেখিয়ে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে হবে। ভুল সংশোধনের জন্য আপনাকে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এ জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন অপশনে ক্লিক করতে হবে।
বাংলাদেশে পাসপোর্ট নবায়ন করতে কি কি ডকুমেন্টস লাগে ?
পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনরায় ইস্যু করার জন্য, একজন আবেদনকারীর জন্য প্রাথমিকভাবে নিম্নলিখিত দুটি নথির মধ্যে যেকোনো একটি থাকা আবশ্যক: বাংলাদেশ জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) কার্ড অথবা ১৭-সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর (BRN) উল্লেখিত জন্ম নিবন্ধন সনদ।
Nid ছাড়া পাসপোর্ট করা যাবে কি?
ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে, আপনার কাছে একটি বাংলাদেশী জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদ (BRC) থাকা আবশ্যক, যা everify.bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে যাচাই করা যাবে।